• রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

অদক্ষতা ও অসদাচরণের জন্য দোষীসাব্যস্ত পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমানকে অবশেষে বদলি

Reporter Name / ৩৫৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দুর্নীতির কারনে দোষী সাব্যস্ত নোয়াখালী ও লক্ষীপুর পোস্ট অফিসের পরিদর্শক আব্দুর রহমানকে অবশেষে বদলী করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০ মে তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে মর্মে মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে দৈনিক বাংলার মুকুলকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পোস্ট অফিসের অতিরিক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন। তিনি আরও বলেন পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় তাকে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পোস্ট অফিসে পরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্হা নেয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরেও আব্দুর রহমানকে এর পূর্বেও তিন মাসের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা প্রহসনের শাস্তি দেয়া হয়েছে মর্মে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আপনি পোস্ট মাস্টার জেনারেল ছালেহ আহমেদ সাহেবকে প্রশ্ন করুন।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দা পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমান দীর্ঘদিন লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় চাকরি করাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ আছে ডাক বিভাগকে বার বার ম্যানেজ করে তিনি পাড় পেয়ে যাচ্ছেন। এমনি এক ঘটনায় বিগত ২০২১ সনের ২৬ নভেম্বর আব্দুর রহমান লক্ষ্মীপুর পোস্ট অফিস পরিদর্শক দায়িত্বে থাকাকালীন পোস্ট অফিস কম্পাউন্ডে ঠিকাদারের কনস্ট্রাকশন কাজ শেষে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ রড থেকে অর্ধেক পরিমাণে রড ৪জন লেবার সহকারে একটি পিক-আপে করে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি দায়িত্বরত পোস্ট মাস্টার গোলাম মহি উদ্দিন, নৈশ্য প্রহরী শাহ আলম, পেকার সঞ্জু চন্দ্র দে, পরিছন্নতাকর্মী মোহাম্মদ উল্ল্যা লিখিত ডাক বিভাগের উর্ধ্বোতন কর্মকর্তাদের জানান। বিষয়টিতে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমান ডাক বিভাগ বিভাগকে ম্যানেজ করে পাড় পেয়ে গেছেন বলে ডাক বিভাগের ভিতরে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তিনি যখন বিগত ১৮/৫/২০০৮ তারিখ থেকে ৭/৬/২০১০ তারিখ পর্যন্ত এবং ৭/৯/১১ তারিখ থেকে ১২/২/২০১৪ তারিখ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপ- বিভাগ রামগঞ্জ উপ-বিভাগ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে বিভিন্ন তারিখে রামগঞ্জ উপ-বিভাগের অধীন খিলপাড়া সাব অফিসে নির্ধারিত পরিদর্শন ও ভেরিফিকেশনকালে নির্ধারিত প্রশ্নমালা অনুযায়ী পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন না করে লেনদেন করতে আসা গ্রাহক হতে সংগৃহীত ১০ টি পাশ বইয়ের স্থিতি যাচাই করতেন না। পাশ বই যাচাইকল্পে এসবি ৪৬ ইস্যু না করা এবং সময়মত পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দিতেন না। উক্ত সাব অফিসে দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে সাধারণ হিসাব খাতে ১,৫৩,০০০/ টাকা, মেয়াদী হিসাব খাতে ৪,১০,৬০০/- টাকা ও সঞ্চয়পত্র খাতে ৩৫,২৫,০০০/- টাকাসহ মোট ৪০,৮৮,৬০০/- টাকা আত্মসাতের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দায়ে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারি (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা’ ২০১৮ এর ৩(ক) ও (খ) বিধি মোতাবেক ‘অদক্ষতা ও অসদাচরণ’- এর অভিযোগ আনয়ন করা হয়। পরে বিষয়টিতে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিগত ১০/১২/২০২০ তারিখে প্রথমে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ তৈয়ব আলী, পরবর্তীতে বিগত ০৮/০৪/২০২১ তারিখে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোঃ মনজুরুল আলমকে তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারি কর্মকর্তা ১২/৭/২০২৩ তারিখে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমান
কে দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অভিযোগের বিষয়ে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সত্য নয়। ডাক বিভাগ কেন আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করলো প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আপনার অফিসের চারজন সহকর্মী আপনার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে রড চুরির অভিযোগ আনলো কেন জানতে চাইলে তিনি দাবী করে অফিসের রড অফিসেই আছে এবং এবিষয়ে ডাক বিভাগ তদন্ত করে কোন অনিয়ম পায়নি বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে। লক্ষ্মীপুর প্রধান ডাকঘরের কর্মরত ৪জন সহকর্মী তাদের চোখের সামনে দেখলেন আপনি চারজন লেবারের মাধ্যমে অফিস থেকে রড নিয়ে গেছেন আর আপনার ডাক বিভাগের ঢাকা ও চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তা সেখান থেকে দেখলো রড চুরি হয়নি কোনটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রশ্ন করা হলে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমান নিশ্চুপ থাকেন।

এদিকে পোস্ট অফিস পরিদর্শক আব্দুর রহমানে বদলির এ খবরে নোয়াখালী ও লক্ষীপুর পোস্ট অফিসসহ পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পোস্ট অফিসের গ্রাহক এবং সর্বস্হরের জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আমাদের প্রতিনিধিকে জানায়, আব্দুর রহমান ছিলেন দুর্নীতিবাজ। মিষ্টি ভাষী অমায়িক ব্যবহারের আড়ালে তাঁর ছিল দুর্নীতির প্রবনতা। তাঁর কারনে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু এরপরও সবসময়ই দুর্নীতি করে কীভাবে পার পেয়ে যায়। তার সাথে ডাক বিভাগের ডিজি ও পিএমজি সহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক থাকায় তাকে কেউ কিছু করতে পারেনি। তার দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ ডাক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা পেত বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন। প্রশাসন এবং স্হানীয় কিছু সংখ্যক সাংবাদিকরাও এর ভাগ পেতেন তাঁরা জানান। তার বদলির খবরে অনেকেই আনন্দিত। আবার অনেকে বলেছেন, আব্দুর রহমানের অপকর্মের ফল হিসেবে তাকে বদলি করা হলেও ডাক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে জনগণের রোষানল থেকে রক্ষা করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেছেন। ডাক বিভাগের উচিত ছিলো তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করার আগ পর্যন্ত তাকে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সাময়িক বরখাস্ত করা। অনেকে বলছেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সে যেকোনো মূল্যে যে কোন সময় আবারো নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে চলে আসতে পারে। আর পূর্বের সম্রাজ্যে এসে দুর্নীতির থাবা পুনরায় বিস্তার করবে। সে যেন পুনরায় না আসতে পারে তারও দাবী জানান ডাক বিভাগের কাছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd