• রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

রায়পুরের ভূমি অফিসগুলো যেন দুর্নীতির হাট, পর্ব-১

Reporter Name / ১১ Time View
Update : সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারি (জমাখারিজ), খাজনা ও নাম সংশোধন সহ ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা সমাধানে এসব ভূমি অফিসে গরীবের পকেট কাঁটা হচ্ছে। এই পকেট কাঁটার মূল হোতা প্রায় সব ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি’র নাম ভাঙিয়ে সিন্ডিকেট করে প্রতি নিয়ত পকেট কাঁটছেন অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী, হিসাব রক্ষক, নাজির, সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার)। ঘুষের টাকা হাতানোর জন্য তাঁরা দালাল সিন্ডিকেট গঠন করেছেন। এই সব দালালদের মাধ্যমে তারা ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন। দালালদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা না দিলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে আর দালালদের দায়িত্ব দিলে হর হামেশায় কাজ হয়ে যায়।

জানা গেছে, কোনো জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপরে শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্য। আবেদনের পরে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিস থেকে খড়সা খতিয়ান প্রস্তাব নিতে হলে দিতে হয় ঘুষ, এরপর সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নেও ঘুষ, এরপর নাজিরের টেবিলে ঘুষের টাকা জমা না হলে এসিল্যান্ডের টেবিলে ফাইল যায় না। এভাবে প্রতিনিয়ত একজন সেবা প্রত্যাশীকে ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিয়ে নামজারি করাতে হয়। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসের সব জায়গায় চলে রমরমা ঘুষের লেনদেন।
দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়ন এলাকার সফিউল্লাহর পুত্র আব্দুল মন্নান বলেন, আমি রায়পুর এসিল্যান্ড অফিসে জমাখারিজ (নাম জারি) করতে গেলে আমাকে এক সপ্তাহ ঘুরানো হয়। পরে অফিস সহায়ক মনিরউদ্দিন আমাকে বলে, এসিল্যান্ড টাকা ছাড়া কাগজে স্বাক্ষর করবে না, পরে কোনো উপায় না থাকায় মনিরউদ্দিনকে আমি ৩৭০০ টাকা দেই, এছাড়া সার্ভেয়ার সাজেদুলও আমার থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে। এভাবে কয়েক জায়গায় টাকা দেয়ার পরে আমার কাজ করে দিয়েছে। উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন এলাকার নুর মোহাম্মদের পুত্র আবুল কালাম বলেন, আমি রায়পুর এসিল্যান্ড অফিসে জমাখারিজ (নাম জারি) করতে গেলে তারা আমাকে বলে আপনার কাগজে এই সমস্যা ওই সমস্যা। আমি আমার কাজটি করে দেয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করলে সরকারি খরচের বাহিরে আমার থেকে অফিস সহায়ক মনিরউদ্দিন ভাই এসিল্যান্ডের কথা বলে ৩৬০০ টাকা নিয়েছে। এছাড়া সার্ভেয়ার সাজেদুলও ৫০০ টাকা নিয়েছে। উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের পুত্র আবুল হাসেম ব্যাপারী বলেন, আমি চরবংশী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমা খারিজ করতে গেলে আমাকে দুইবার হয়রানি করা হয়েছে। পরে আমি রায়পুর এসিল্যান্ড অফিসে অভিযোগ দেই। তাতেও কোনো কাজ হয় নাই। পরে আমি কোনো উপায় না পেয়ে স্হানীয় খাসেরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারকে ১৫০০ টাকা দিলে তিনি আমার কাজ করে দেয়। বামনী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার আব্দুল আউয়াল বলেন, রায়পুর এসিল্যান্ড অফিসের হিসাব রক্ষক জাহাঙ্গীর আলম আমার শ্বশুর মান্নানের জমাখারিজ (নামজারি) বাবদ ৩৭০০ টাকা নিয়েও কাজ করে দেয় নাই।
এছাড়া রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়ন, সোনাপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার একাধিক সেবা প্রত্যাশী এ প্রতিবেদককে বলেন, নামজারি করতে সরকারী খরচ ১১৭০ টাকা। কিন্তু বাড়তি ঘুষের টাকা না দিলে কাজ হয় না। নাম জারি করতে প্রায় প্রতিটি ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস থেকে নাম জারি করতে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয়। কিছু কিছু নাম জারি করার ক্ষেত্রে লক্ষ টাকাও আদায় করা হয়। অথচ সরকারী খাতে জমা হয় মাত্র ১১৭০ শত টাকা, বাকি টাকা চলে যায় অসৎ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের পকেটে। তারা এসিল্যান্ডের নাম ব্যবহার করে এই টাকা গ্রহণ করেন। নামজারি করতে হলে সরকারী খরচের টাকা বিকাশের মাধ্যমে জমা দেয়ার কথা থাকলেও অফিস সহায়ক, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী, সার্ভেয়ার, হিসাব রক্ষক, নাজিরসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা সিন্ডিকেট করে নিজের হাতে টাকা নেন। নিয়ম অনুযায়ী অফিসের কোনো স্টাফের হাতে হাতে টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া খাজনা দেয়ার সময় আপনার জমিতে সরকারি সম্পত্তি আছে ভয় দেখিয়ে বাড়তি টাকায় আদায় করা হয়। ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সব কাজে বাড়তি টাকা না দিলে ভূমি অফিসে সহসাই কোনো কাজ হয় না। এসব অফিসে সবচেয়ে সমস্যা হয় অতি সাধারণ এবং অশিক্ষিত সহজ- সরল লোকজনের। অন্যদিকে এলাকার অনেকে প্রভাবশালীরা ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে সরকারি সম্পত্তিসহ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সম্পত্তি অকৌশলে নিজের নামে রেকর্ড করে নেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, আমার অফিসে সরকারী খরচ বাদে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ টাকা নেয় কি-না আমার জানা নাই। এ বিষয়ে কেহ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ঘুষের বিনিময়ে কোনো কাজ করা হয় বলে আমার জানা নেই। তবে যদি এমন হয়ে থাকে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd