• রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

রায়পুরে জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন

Reporter Name / ৪০৬ Time View
Update : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

প্রদীপ কুমার রায়:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তাঘাট, বাজার, বাসাবাড়ি এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঢুকছে পানির স্রোত। স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই, সঙ্গে বেড়েছে চলাচলের ভোগান্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ—দীর্ঘদিনের নিষ্কাশন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, দখল ও ড্রেনেজ সংকটই এই দুরবস্থার মূল কারণ।

রায়পুর পৌরসভার ১, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলি তো বটেই, মূল সড়কও হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে আছে। স্কুলগামী শিশুদের কাঁধে ব্যাগ নয়, বরং একজোড়া স্যান্ডেল আর ভেজা পোশাক এখন নিয়মিত চিত্র। শহরের বণিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি রাজিব বনিক বলেন, বৃষ্টি একটু হলেই দোকানের সামনে পানি জমে যায়। গ্রাহক আসতে পারে না, বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক না করলেই আমাদের ব্যবসা গুটাতে হবে। দেবীপুর এলাকার গৃহবধূ রহিমা বেগম বলেন, ঘরে রান্না করা যায় না, পানির মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে সবকিছু করতে হয়। ছোট ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা তো বন্দিজীবনে আছি। স্থানীয় বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ক্রেতা আসে না, সবজিও পচে যায়। দিনের শেষে লোকসান গুণতে হয়। শুধু ঘরবাড়ি নয়, হাসপাতাল ও বাজার এলাকাও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত।

রায়পুর পৌরপ্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরান খান বলেন, জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। পুরনো ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। পৌরসভার নতুন প্রকল্পের আওতায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ড্রেন সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় এক পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশকর্মী বলেন, নিয়মিত খাল খনন ও ড্রেন পরিষ্কার না হওয়া, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ এবং জলাশয় ভরাটের কারণেই জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে শুধু উন্নয়ন প্রকল্প নয়, জনসচেতনতা ও পরিবেশ সংরক্ষণকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

স্থানীয়দের দাবি, অচিরেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাল পুনঃখনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাদের কথায়—আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু সে উন্নয়ন যেন আমাদের ডুবিয়ে না দেয়।

রায়পুরে জলাবদ্ধতা এখন শুধু একটি বর্ষাকালের সমস্যা নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকা এক ভয়াবহ নাগরিক দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিত উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকাই পারে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে। না হলে, রায়পুরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আরও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd