প্রদীপ কুমার রায়:
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যখন রাজনীতির মাঠে চূড়ান্ত প্রস্তুতির হাওয়া, ঠিক তখনই রায়পুর বাজারজুড়ে দেখা দিয়েছে এক ব্যতিক্রমী গণতান্ত্রিক উত্তাপ—বণিক সমিতির নির্বাচন। প্রায় স্বাধীনতার পর ব্যবসায়ীদের এই ভোটযুদ্ধে বাজারে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য, সংহতির ডাক ও নেতৃত্বের নতুন সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবক সাইফুল ইসলাম মুরাদ।
সোমবার (২৬ মে) ছিল রায়পুর বণিক সমিতি নির্বাচন-২০২৫-এর মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। বিকেল পর্যন্ত ১৬টি পদে মোট ৫৬ জন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম-এর কাছে মনোনয়ন জমা দেন। নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে ২৮ জুন, শনিবার। ১,৬২৫ জন লাইসেন্সধারী ভোটার সরাসরি ভোট দিয়ে বেছে নেবেন তাদের নেতৃত্ব।
আজ বিকেলের ভিড়ে, সবার দৃষ্টি ছিল এক প্রার্থীর দিকে—সাইফুল ইসলাম মুরাদ। বহু প্রত্যাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে, ‘চিরচেনা শিকড়ের বাজারে’ নেতৃত্বের আশ্বাস নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন বড় ভাই আলী হায়দার বেলাল পাটোয়ারী, ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিরা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মনোনয়ন জমা দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে সাইফুল ইসলাম মুরাদ বলেন, আমি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নয়, বরং ব্যবসায়ীদের স্বার্থের ধারক হয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনাদের সমর্থন পেলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অবসান, ট্রাফিক শৃঙ্খলা এবং কাঠামোগত উন্নয়নের এক সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলব। জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, আমি চিরকাল এই বাজারের মানুষের পাশে থাকতে চাই। এই বাজারই আমার শিকড়, এখানেই আমার গর্ব।
বণিক সমাজের একাংশ মনে করছেন, বহুদিন পর এই নির্বাচন বাজারের নেতৃত্বে পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, মুরাদই হতে পারেন সেই পরিবর্তনের অগ্রনায়ক। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘস্থায়ী সংকট, ট্র্যাফিক বিশৃঙ্খলা ও সংগঠনবিহীন অবস্থার মধ্যে মুরাদ একটি আশার নাম হয়ে উঠেছেন।
সাইফুল ইসলাম মুরাদ শুধু একজন প্রার্থী নন, তিনি একটি প্রক্রিয়ার প্রতীক। তিনি মেসার্স হায়দর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক, আমেনা-আকবর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং রায়পুর ব্যবসায়ী ফেডারেশনের আহ্বায়ক। নির্বাচন আয়োজনেও তার উদ্যোগ ছিল মুখ্য।
১৯৯১ সালে রায়পুর সরকারি মার্চেন্টস একাডেমি থেকে এসএসসি পাস করা মুরাদ উচ্চশিক্ষা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। জন্মেছেন একটি বনেদি মুসলিম পরিবারে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যবসা ও সমাজসেবাকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।
ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী—
বণিক সমিতির সভাপতি পদে ৪জন, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৫ জন, সহ-সভাপতি পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন, সহসাধারণ সম্পাদক পদে ৩জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ৩জন, ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৪জন, যোগাযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে ২জন, কোষাধ্যক্ষ পদে ৪জন, সমাজসেবা ও ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদে ৩জন, পাঠাগার ও লাইব্রেরি সম্পাদক পদে ৩জন, ৪টি সদস্য পদে ১২জনসহ ১৬টি পদে ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। মোট ১,৬২৫ জন ট্রেড লাইসেন্সধারী ভোটার প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের তাদের নেতা নির্বাচন করবেন।
রিটার্নিং অফিসার মো. মাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। সকল প্রস্তুতি চলছে সেভাবেই।
যেখানে জাতীয় নির্বাচন সামনে, সেখানে রায়পুরের এই স্থানীয় নির্বাচন যেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি প্রতিচ্ছবি। নেতৃত্ব, পরিবর্তন, অংশগ্রহণ—সব কিছুই যেন একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক অনুশীলনেরই প্রতিফলন। স্থানীয় হলেও এ নির্বাচন হয়ে উঠেছে একটি বৃহৎ আলোচনার অংশ।
রায়পুর বাজারের ভোট যেন শুধুই পদ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার খেলা নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি শিকড়ের টান, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি এবং নেতৃত্বের পুনর্জন্ম। পাঠকের দৃষ্টিতে, রায়পুর বণিক সমিতির নির্বাচন ২০২৫ এখন শুধুই একটি সংগঠনের নির্বাচন নয়—এটি একটি গণতান্ত্রিক চেতনার জাগরণ।