কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)উপজেলা সংবাদদাতা:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনরোধে ৩১শ’ কোটি টাকার বাঁধ প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে প্রতিবাদে গণসমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক সাংসদ এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী এআর হাফিজ উল্যাহ। রোববার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার কাদির পন্ডিতেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশের করা হলেও ব্যানারে কোন আয়োজক কমিটির নাম নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা এড.আমজাদ ও চরলরেন্স জামায়াতের সভাপতি ছাইয়েদ আনোয়ার হোসেন ব্যক্তি উদ্দেশ্য হাসিল করতে এ সমাবেশের আয়োজন করেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে যারা নদী বাঁধ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের কাউকে ডাকা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাত থেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই এ গণ সমাবেশকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী সমাবেশ বলে উল্লেখ করেন। এ সমাবেশে জোটের প্রার্থী মিসেস তানিয়া রব ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহকে সমাবেশে উপস্থিত হননি। জানা যায়, রামগতি ও কমলনগরে মেঘনার ভাঙন দীর্ঘদিনের। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আ স ম আবদুর রব পরীক্ষামূলক মতিরহাট বাজার ও রামগতি বাজারে ব্লক বাঁধ দেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ওই দুই বাজার সংরক্ষিত আছে। এর পরে ১৯৯৬ সালে রব সাহেব নৌপরিবহন মন্ত্রী হওয়ার পর ভাঙন থেকে রক্ষায় মেঘনা নদী ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেন। ওই সময় ৩ দিন ড্রেজিংয়ের কাজ চললেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চলমান কাজ জালানি সংকট দেখিয়ে বন্ধ করে দেয় সরকার। দীর্ঘদিন মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত থাকায় রামগতি-কমলনগর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আন্দোলনের উদ্যোগ নেয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তখনকার সাংসদ আশরাফ উদ্দিন নিজান সাবেক সাংসদ আ স ম আবদুর রব, সিএসপি আবদুর রব চৌধুরী, মেজর (অব:) আবদুল মান্নান, প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমানদের নিয়ে ২০১২ সালে নদী ভাঙনরোধে একটি কমিটি করেন। ওই কমিটিতে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত দুলালকে আহবায়ক ও হাজিরহাট উপকূল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেবকে সদস্য সচিব এবং চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে মেঘনার ভাঙনরোধে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময় সাংসদ আশরাফ উদ্দিন নিজান ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ১ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে সরে যান। তখন মেজর (অব:) আবদুল মান্নান ২০হাজার জিও ব্যাগ দেন।যার মূল্য ছিলো ২৫লাখ টাকা। এবং স্থানীয় শিল্পপতি আইয়ুব নগরের প্রতিষ্ঠাতা হাজী সিরাজুল ইসলাম আইয়ুব ২হাজার জিও ব্যাগ দেন। এর পর অর্থ সংকটে ওই বাঁধ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মেঘনার তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকায় ফুষে উঠে এলাকাবাসী। পরবর্তীতে সরকারের নজরে আনতে ২০১৫ সালে নদী ভাঙন সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেবকে আহবায়ক ও চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়। মেঘনার ভাঙন রক্ষায় ওই কমিটির দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের লেখনীতে নজর পড়ে সরকার মহলের। এর আগে ঢাকার আয়কর আইনজীবি কমলনগরের কৃতি সন্তান এড, মাহবুবুর রহমান মেঘনার ভাঙন রক্ষার্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সময়ের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন) এর প্রচেষ্টায় রামগতিতে সাড়ে ৪কিলোমিটার ও কমলনগরে ১ কিলোমিটার কাজের জন্য ১শ’৯৮কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর আবার নতুন করে আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এড আবদুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি রামগতি- কমলনগর বাঁচাও মঞ্চের আন্দোলনের ব্যানারে যুক্ত হন। এর পর এ আসনের মহাজোটের এমপি মেজর (অব:) আবদুল মান্নান ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউনিয়নের মেঘনা এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। কিছু সময় বাঁধের কাজ ঠিকমত চললেও সরকার পতনের পর কিছু ঠিকাদার পালিয়ে যায় এবং অর্থছাড় না হওয়া ধীরগতিতে চলছে বাঁধের কাজ।
এ সমাবেশের সভাপতি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, তাকে এড. আমজাদ ও আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ঘোষণা করেছেন। এছাড়া তিনি কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে সমাবেশের সঞ্চালক চরলরেন্স ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি ছাইয়েদ আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা এড.আমজাদ হোসেন এ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে।সাবেক দুই বারের এমপি হওয়ায় এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে।
এ দিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহর প্রতিনিধি মুফতি শরীফুল ইসলাম বলেন, আয়োজক কমিটি বলছে এখানে কোন প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথি থাকবে না। দলমত নির্বিশেষে সবাই নদীর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করবে।এখন এখানে এসে দেখি উল্টো। যার কারনে আমাদের প্রার্থী আসেনি।
এ বিষয়ে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, দীর্ঘদিন থেকে যারা ভাঙনরোধে নদী বাঁধ রক্ষার আন্দোলন করেছেন তাদের কাউকে ডাকা হয়নি। সমাবেশে ছাত্রদলের ছেলেরা বক্তব্য দেওয়ার কারণে অনেকে বক্তব্য দিতেও পারেনি। এখানে আমাদের লোক জড়িত থাকায় কিছু বলতে পারছি না।
সাবেক নদী ভাঙন সংগ্রাম কমিটি আহবায়ক জেএসডি’র উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব বলেন, মেঘনার ভাঙন রোধে শুরু থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি আমরা। মেঘনার ভাঙনকে পুঁজি করে এখানে অনেকেই রাজনীতি করছে। নদী ভাঙনরোধে আমার নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রবের অবদান বলে শেষ করা যাবে না।