নিজস্ব প্রতিবেদক:
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর মাছ-মাংস ও কাঁচা বাজার নতুন নির্মিত আধুনিক দোতলা ভবনে স্থানান্তরে বাধা কোথায়? কেনো বিলম্বিত হচ্ছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পৌরবাসীর কাছে। উপরন্তু যাদের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অদৃশ্য কারণে তারা নির্বাক! রামগঞ্জ পৌরসভার অধীনে নির্মিত আধুনিক দোতলা মার্কেটটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার পরেও মাছ-মাংস ও সবজির বাজার সেখানে স্থানান্তর করা হয়নি।
৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পরও বাজারটি যথাস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়নি বরং ব্যক্তিগত জায়গায় বাজার চালু রেখে তা ইজারা দেয়া হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সম্পদ রেখে কার পকেট ভারী হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পৌরবাসীর মধ্যে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পৌর মাছ-মাংস ও কাঁচা বাজারের জন্য নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার আহ্বান না করে, ব্যক্তিগতভাবে ইজারা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে পৌরসভা, যা ব্যবহার হতে পারত পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজে।
সুত্র জানায়, ২০২০ সালের শেষের দিকে পৌর কর্তৃপক্ষ আঙ্গারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ছালেহ আহম্মদের কাছ থেকে মাছ ও কাঁচা বাজারের জন্য ১ লক্ষ টাকায় জায়গা লিজ নেয়। সেখানে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেড নির্মাণ করা হয় এবং ২০২১ সালে ১৮ লক্ষ টাকায় বাজারটি ইজারা দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে ২০২২ ও ২০২৩ সালে নিয়মিত টেন্ডার না করে ব্যক্তিগতভাবে মাছ ব্যবসায়ী নজির আহম্মদকে বছরে ২০ লক্ষ টাকায় মৌখিকভাবে ইজারা দেয় তৎকালীন মেয়র। সেই থেকে এই পর্যন্ত একই নজিরেই সীমাবদ্ধ রামগঞ্জ মাছ বাজার। ব্যবসায়ী নজির আহম্মদ সেইসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি মেয়রের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছর ২০ লক্ষ টাকা দিচ্ছেন। অন্যদিকে, জায়গার মালিক ছালেহ আহম্মদ দাবি করেছেন, মেয়র তার কাছ থেকে জায়গা লিজ নিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন এবং গত বছর লিজ নবায়নের নামে সময় চেয়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
রামগঞ্জ পৌর এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, মাওলানা সানাউল্লাহ ও ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এবারের গরুর হাটের ইজারা হয়েছে ২৪ লাখ টাকা, যেখানে গত বছর তা ছিল ৩২ লাখ টাকা। এভাবে অন্যান্য হাট-বাজারেও উল্লেখযোগ্য হারে ইজারা মূল্য কমে গেছে বলে তাঁদের অভিমত।
এছাড়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরে মাছ বাজার ও কাঁচা বাজার ইজারার আওতায় আনা হয়নি, যা রাজস্ব আদায়ের পরিমাণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। পৌর এলাকার রাস্তা সংস্কারে ঠিকাদার শিডিউল মত কাজ না করে নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহার করাতে সংস্কারকৃত রাস্তা বছর না যেতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এছাড়া রাজস্ব আদায়ে এ বিপর্যয় নিয়ে সাধারণ নাগরিক ও প্রশাসনের মধ্যে যে বৈপরীত্য রয়েছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
পৌরসভার একজন সাবেক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভার আয়ের একটি বড় অংশ মাছ ও কাঁচা বাজার থেকে আসে। অথচ এভাবে বিধিবিধান উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত ইজারা দেয়ার বিষয়টি অস্বচ্ছ এবং অগ্রহণযোগ্য।
পৌরবাসীর মধ্যে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, পৌর এলাকায় রাস্তাঘাটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত মানুষ। এই ৪০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় হলে অন্তত কয়েকটি রাস্তা সংস্কার করা যেত। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত আধুনিক মার্কেট চালু না করে কারা এই অর্থ আত্মসাৎ করছে, তা খুঁজে বের করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা। এছাড়াও জনগণের স্বার্থে দ্রুত নতুন মার্কেটটি চালু করা হোক এবং এই অনিয়মের তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করারও জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে রামগঞ্জ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ রবিন শীষ ১৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে দৈনিক বাংলার মুকুলকে বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি দুই মাস হয়েছে, মাছ ও কাঁচা বাজারের ইজারা নিয়ে কিছু জটিলতা আছে, তবে শীঘ্রই নতুন ভবনে মাছ-মাংস ও কাচামালের বাজার স্হানান্তর করা হবে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে হাট- বাজারের ইজারা কম হয়েছে তথ্যটি সঠিক নয় বলে পৌর প্রশাসক দাবী করেন। এছাড়া রাস্তা সংস্কারে ঠিকাদার কর্তৃক নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের বিষয়ে এলাকার লোকজনকে প্রমানসহ তথ্য দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।