• শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
Headline
বজ্রপাত যেন কৃষকের প্রাণহানির আরেক নাম: প্রতিরোধে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চাঁদা না দেওয়ায় গাভী আটক, বাছুর নিয়ে আদালতে গৃহবধু রায়পুরে জেলেদের জন্য প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ লক্ষ্মীপুরে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন ২৪ জন কমলনগরে মাদক সেবনে বাঁধা দেয়ায় ৪ যুবককে পিটিয়ে আহত লক্ষীপুর কমলনগর শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার লক্ষীপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নারী শিক্ষিকাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে জবাই করে হত্যা স্বর্ণালংকার লুট সাংবাদিক সুরক্ষা ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর গাজীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ঈদ পূর্ণ মিলন ও পরিচিতি সভা লক্ষ্মীপুরে কুরআনের হাফেজ শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু: এলাকাবাসীর মাদ্রাসা ঘেরাও

রায়পুরে জেলেদের জন্য প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

Reporter Name / ২৬ Time View
Update : শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

প্রদীপ কুমার রায়:
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন উত্তাল মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায় তারা। নিষিদ্ধ মৌসুমে থেমে যায় উপার্জনের পথ, ঘরে ফিরে আসে অনিশ্চয়তা। সেই চিরচেনা চিত্রে ভিন্ন এক ছোঁয়া এনেছে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মেঘনা নদীতে মাছধরা জেলেদের জন্য বাস্তবায়িত হয়েছে দুটি যুগান্তকারী উদ্যোগ—বিনামূল্যে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া বিতরণ, এবং নিষেধাজ্ঞাকালীন বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে গরুর বাছুর প্রদান। বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিক এসব সামগ্রী বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরান খান। এসময় সিনিয়র উপজেলা সিনিয়র মহৎ কর্মকর্তা এমদাদুল হক, আইসিটি কর্মকর্তা শুভজিৎ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এই উপকূল অঞ্চলে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন বহু জেলে। ঝুঁকি কমাতে এবার প্রথমবারের মতো উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, জেলেদের জীবন রক্ষায় সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। নদীতে মাছ ধরতে যাবার আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। লাইফ জ্যাকেট ও বয়া জেলেদের প্রাণরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিবছর কিছু নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ সময়টিতে উপার্জন বন্ধ থাকায় চরম অর্থকষ্টে দিন কাটে জেলেদের। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ বছর প্রবর্তন করা হয়েছে বিকল্প আয়ের কার্যক্রম—জেলেদের মাঝে গরুর বাছুর বিতরণ।

রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান,
“নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের আয়হীন অবস্থায় না রেখে বিকল্প জীবিকায় স্থিতিশীলতা আনাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। পশুপালন শুধু ক্ষণিকের সহায়তা নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি আয়ের উৎস হতে পারে।”

প্রথম ধাপে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪০ জন উপকারভোগী জেলের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে দেশীয় জাতের উন্নতমানের গরুর বাছুর। পশু চিকিৎসক ও প্রশিক্ষকের সহায়তায় জেলেদের গবাদি পশু পালনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

চর ইন্দুরিয়া গ্রামের এলাকার জেলে মো. নুরু বেপারী বলেন, “আগে নিষেধাজ্ঞার সময় ধার করতাম, অনেক কষ্টে চলতে হতো। এখন বাছুর পেয়ে মনে হচ্ছে আল্লাহ একটা নতুন পথ খুলে দিলেন। দুধ বিক্রি করেই সংসার চলবে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জেলেদের কাছে জনপ্রিয় ২নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মেম্বার আজগর সর্দার বলেন, এই ধরনের পরিকল্পনা শুধু জেলেদের জন্য নয়, সমগ্র উপকূলীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। আমরা চাই এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলুক এবং বিস্তৃত হোক।

উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন উদ্যোগগুলো সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছে। তবে এসব প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে মনিটরিং, প্রশিক্ষণ এবং পশু চিকিৎসা সেবার ধারাবাহিকতার ওপর।

রায়পুরের এই উদ্যোগ নিছক সরকারি অনুদান নয়—এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নিরাপত্তা ও জীবিকার অধিকারে জেলেরা যে অবহেলিত নয়, সেটিই তুলে ধরছে এই কর্মসূচি। জেলেদের জীবনে এক নতুন ভোরের সূচনা হতে পারে এই পদক্ষেপ। একদিন হয়তো সমুদ্রপাড়ের জেলেপাড়াগুলোয় শোনা যাবে—“নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো এখন আর অনাহারের নয়, এগুলো সম্ভাবনার দিন।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd