প্রদীপ কুমার রায়:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ১১টার দিকে ৫ নম্বর চরপাতা ইউনিয়নের চৌধুরীর পোল এলাকায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন রায়হান হোসেন সুজন (২৫)। নিহত রায়হান রায়পুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দার বাড়ীর সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্রুতগতির একটি ট্রাক বিপরীত দিক থেকে আসা রায়হানের মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করেন। কিন্তু চাঁদপুর পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।
রায়হানের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা বলেন, “আমার ছেলে সকালে বেরিয়ে গেল, আর ফিরবে না—এটা ভাবতেই পারছি না। ওর তো জীবন শুরুই হলো না।”
পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেটা খুব ভদ্র ছিল। সামনে ওর অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।
ঘটনাস্থল চৌধুরীর পোল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ এলাকায় প্রায়ই যানবাহনের গতিরোধক না থাকার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, এ সড়কে গতিরোধক নেই, ট্রাক-লরি গুলো বেপরোয়াভাবে চলে। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা পাইনি।”
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন ভূঞাঁ জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘাতক ট্রাকটি আটক করা না গেলেও, চালককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করা হয়েছে। ট্রাকটি আটকের জন্য অভিযান চলছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার এই ধারাবাহিকতা রোধে স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে স্পিড ব্রেকার, সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ও নিয়মিত ট্রাফিক নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বছরজুড়ে নানা আন্দোলন হলেও দুর্ঘটনার ভয়াল থাবা থেমে নেই। রায়হানের মৃত্যু আরেকবার প্রমাণ করল, সচেতনতা ও কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতিদিনই এমন প্রাণ ঝরবে সড়কে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই হারানো প্রাণের দায় কে নেবে?