প্রদীপ কুমার রায়:
পৈশাচিক হামলা, বসত ভিটাসহ চারটি পাকা দোকানঘর গুড়িয়ে দেয়া, লুটপাট ও শ্লীলতাহানিসহ নারীদের পরিধেয় স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার মধুপুর এলাকার বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ সফি উল্যা।
সোমবার ১৯মে দুপুরে শহরের আরএফসি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি কি এই দেশে থাকতে পারব না? ষোল বছর ধরে সহ্য করছি, এখন প্রকাশ্যে আমার ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিচ্ছে—এ কেমন বিচার? এত বছর এই এলাকায় আছি, এখন পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে। এখন দেশ ছাড়তেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে হামলাকারিরা।
সফি উল্যা অভিযোগ করেন, গত ১৮ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডস্থ শ্রমিক বিড়ি ফ্যাক্টরির উত্তর পাশে তার মালিকানাধীন দোকান ও বসতঘরে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। দোকানের সার্টার ভেঙে তারা ভিতরে ঢুকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালামাল ভাঙচুর ও লুট করে। এরপর বসতঘরের দেয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকে নগদ ৫ লক্ষ টাকা ও ৪.৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। ঘরের আসবাবপত্র, রান্নাঘর, টয়লেটসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করে। অভিযুক্তদের মধ্যে ইমতিয়াজ আরিফ (৩১), আমির পাটওয়ারী (৬৫), নূর হোসেন (৫৮), মুরাদ হোসেন (৩৮) সহ ১০-১৫ জন দেশীয় অস্ত্র, দা, চাইনিজ কুড়াল, পিস্তল ও হ্যামারসহ সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়।
তিনি আরও জানান, হামলার সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে রায়পুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযুক্তরা পালাতে গেলে দু’জনকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। অথচ পরদিন মাত্র একটি চুরির মামলা রুজু করে তাদের দুর্বল ধারায় আদালতে পাঠানো হয়, ফলে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, রায়পুর থানার কিছু পুলিশ সদস্য আরিফ গংয়ের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত থেকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। সফি উল্যার ভাষায়, “পুলিশ অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে মামলা দুর্বল করেছে। গ্রেফতার করা হলেও তারা আবার হেঁটে বেড়াচ্ছে। এবং হামলাকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জানিয়ে দেয়, “দখল ছাড়লে তো ভালো, না হলে গুম করে ফেলব।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীর পুত্রবধূ শান্তা আক্তার, প্রতিবেশী ফিরোজ আলম, সবুজ হোসেন, লাইলী বেগম, আলী হায়দার ও নুরুল ইসলাম নুরু প্রমুখ। উপস্থিত সবাই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সফি উল্যা শেষ পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহর কাছে বিচার চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখেন, আমি কার কাছে যাব? আমার ঘরবাড়ি, সন্তান, জীবন সব আজ হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুঁঞা বলেন, ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক আমরা আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। বাদীর নিজের হাতের লেখা এজাহারে মামলা হয়েছে। ঘটনা যা ঘটেছে তা যথাযথ তদন্ত করে যে ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়ে সেই মোতাবেক আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মনগড়া।