• রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
Headline
শহীদ জিয়ার পথই আমাদের একমাত্র দিকনির্দেশনা —অ্যাডভোকেট মনির রায়পুরে সড়কে গাছ, যান চলাচলে ভোগান্তি রায়পুরে জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন লক্ষ্মীপুরে ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ লক্ষ্মীপুরে এক বছরে পানিতে ডুবে ১১১ শিশুর মৃত্যু লক্ষ্মীপুরের সোনালী সুপারি: জাতীয় অর্থনীতির এক অনন্য অধ্যায় লক্ষ্মীপুরে তিন পরিবারের সম্পত্তি জবরদখল লক্ষ্মীপুর আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন  কমলনগরে ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান- লক্ষাধিক টাকা অর্থদন্ড দুয়ারে ভূমি সেবা প্রদানের উদ্যোগ, লক্ষ্মীপুরে তিন দিন ব্যাপী ভূমি মেলা সম্পন্ন

রায়পুরে হায়দরগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা, প্রিন্সিপালকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

Reporter Name / ৩০১ Time View
Update : বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

প্রদীপ কুমার রায়:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক লাঞ্ছনার এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা শিক্ষাঙ্গনকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। বিএসসি শিক্ষক মো. মঞ্জুর আহমেদের ওপর হামলার থানায় এজাহার দায়ের, শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া এবং স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপের পাশাপাশি উঠে এসেছে আরেকটি উদ্বেগজনক চিত্র—এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একটি সংগঠিত ও সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক,স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসার
প্রিন্সিপাল আবদুল আজিজ মজুমদার যোগদানের পর থেকে মাদ্রাসাটি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে থাকে। ফলাফল, শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠানটি দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য, বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফল এবং নিয়মিত পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করে প্রিন্সিপাল জনসাধারণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।

তবে, এই উত্থানই কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের চোখে পড়ে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী প্রবাহ ও মাদ্রাসার আয়ের ওপর নজর রাখছিল। এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে তারা মাদ্রাসাটির বিরুদ্ধে একধরনের পরিকল্পিত ‘মব ভায়োলেন্স’ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

এই চক্রটি প্রথমেই প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এবং চরিত্রহননের স্পর্শকাতর কিছু অভিযোগ ছড়িয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে আন্দোলনে নামায়। মানববন্ধন, কর্মবিরতি ও নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলে।

এক পর্যায়ে এই গোষ্ঠী শিক্ষক সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। প্রিন্সিপালপন্থী ও বিরোধীপন্থী দুটি ধারায় শিক্ষকরা ভাগ হয়ে যান। ঘটনাবলির ধারাবাহিকতায় গত ৭ মে বিকেলে বিএসসি শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. মঞ্জুর আহমেদের ওপর হামলা করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য জায়েদ ইজুদ্দিন ও শিক্ষক মাহবুব জাবেরী, যাদের নাম এজাহারে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই ঘটনার পেছনে আরও একটি বিতর্কিত তথ্য উঠে এসেছে। মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও শিক্ষানুরাগী আওলাদ রাসূল (সাঃ) ছাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের যাবিরী আল মদীনার বিরুদ্ধেও দুর্ব্যবহার করা হয়। যাঁর নেতৃত্বে মাদ্রাসাটি শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল, তাঁকেও অপমানের শিকার হতে হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সভাপতি ও প্রিন্সিপালের মধ্যে ঐক্য থাকায় তাঁদের উভয়কে টার্গেট করা হয়।

শিক্ষক মঞ্জুর আহমেদ এখন মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একাধিকবার হুমকি পাওয়ার পর তিনি থানায় মামলা দায়ের করেন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পর থেকে তিনি মাঝে মাঝে প্রাইভেট নিরাপত্তায় মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন।

অপরপক্ষ বলছে, প্রিন্সিপাল বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। তবে তাঁর সমর্থিত শিক্ষকরা বলছেন, এটি ‘পলায়ন’ নয়—বরং নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি নিজ বাসা ও আত্মীয়দের কাছে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। গত ৭মে জায়েদ ইজ্জুদ্দিন ও মাহবুব জাবেরীর নেতৃত্বে একদল উশৃংখল মানুষ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল আজিজ মজুমদার এর বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। এসময় প্রিন্সিপাল, তার স্ত্রী, শিশুসহ পরিবারের থাকা সবাই আহত হন। পরে পুলিশ সুপারের পরামর্শে তিনি কুমিল্লার বাসায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।

শিক্ষক আনোয়ার হাওলাদার, সালাহ উদ্দিন, আলীমুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু প্রশাসনিক বিরোধ নয়, এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ যেখানে সৎ প্রিন্সিপাল ও নিষ্ঠাবান শিক্ষককে টার্গেট করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আওলাদে রাসূল (সাঃ) ছাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের যাবিরী আল মদিনা বলেন, আমাদের মাদ্রাসা সবসময় আদর্শিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এখন যেটা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।

রায়পুর থানার ওসি জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলা রুজু হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদি কোনো ষড়যন্ত্র থাকে, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া কামিল মাদ্রাসার ঘটনাটি কেবল একটি সহিংসতা বা ব্যক্তিগত বিরোধ নয়। এটি শিক্ষাঙ্গনে গভীরভাবে প্রোথিত একটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। যেখানে একদিকে সৎ ও প্রগতিশীল নেতৃত্ব মাদ্রাসাকে জাতীয় মানচিত্রে স্থান দিতে চায়, অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী মহল সেটি দখল করে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চায়। এখন সময়, প্রশাসন ও জাতি—উভয়ের জাগ্রত হওয়ার। কারণ একজন প্রিন্সিপাল যদি নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়ান, এবং একজন শিক্ষক যদি প্রাণনাশের আশঙ্কায় থাকেন—তবে সেই শিক্ষাঙ্গন আর নিরাপদ থাকে না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd