প্রদীপ কুমার রায়:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (ইউজিআইআইপি) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ৯ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ঘিরে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নকল স্বাক্ষরে কমিটি পরিবর্তন করে পছন্দের লোকদের দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে ইতোমধ্যে চারটি প্যাকেজে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আনা ব্যাংক একাউন্টে হয়েছে। পুরো ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত দুর্নীতির ছক হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় নিম্ন আয়ের পাড়া (লিনিক) বাস্তবায়নের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো ৫ আগস্টের পর একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটের স্বাক্ষর জাল করে পৌরসভার তিন-চারজন কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে নতুন কমিটি গঠন করেন।
১৩ আগস্ট হঠাৎ করেই এক সভার কার্যবিবরণী দেখিয়ে প্রকল্প কমিটি পরিবর্তনের রেজল্যুশন তৈরি করা হয়। এতে পুরনো সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন করে পছন্দের লোকদের যুক্ত করা হয়। একাধিক পৌর কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কর্মকর্তারা মেয়রের স্বাক্ষর নকল করে রায়পুরের প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন কমিটি গঠন করেন। এরপর তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে দ্রুত অর্থ বরাদ্দের আবেদন পাঠানো হয়।
পৌরসভা থেকে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে চারটি প্যাকেজের বিপরীতে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বলে জানা গেছে। এডিবির অর্থায়ন থাকায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক অনুদান ব্যবস্থাপনার জন্যও এক ধরনের সতর্ক সংকেত বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশ্লেষকরা।
রায়পুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম আলমাস অভিযোগ করেন, “রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে একটি সুবিধাবাদী চক্র প্রকল্পের বরাদ্দ লুটে নিতে তৎপর হয়েছে। নামের তালিকা বদল, জাল সই—সবই দুর্নীতির অংশ। জনগণের টাকা এভাবে আত্মসাৎ মেনে নেওয়া হবে না।”
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর জাহের মিয়াজিও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “সরকারি প্রকল্পে এত বড় অনিয়ম চলতে পারে, এটা কল্পনাও করা যায় না। তদন্ত হলেই পুরো চিত্র স্পষ্ট হবে।”
হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে অপসারিত মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, “লিনিক প্রকল্পের কমিটি পরিবর্তনে আমি কোনো সই করিনি। বরং আমার স্বাক্ষর নকল করে নতুন তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি গভীর তদন্ত সাপেক্ষ।”
অপসারিত কাউন্সিলর আবুল হোসেন জানান, তার ওয়ার্ডে শিউলি আক্তার প্রথমে চেয়ারপারসন ছিলেন। কিন্তু পরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁকে বাদ দিয়ে শাহনাজ আক্তারকে নতুন চেয়ারপারসন করা হয়। তিনি বলেন, “সব ওয়ার্ডেই এমন বদলি করা হয়েছে। তদন্ত হলেই দুর্নীতির প্রমাণ মিলবে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকরা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৮ আগস্ট মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেলকে অপসারণ করে। ঠিক তার কয়েকদিন আগেই এই বিতর্কিত লিনিক কমিটি পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে।