বিশেষ প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী সদস্য সচিবের ওপর আতর্কিত হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খানের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল) নির্বাচন পলিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আওয়ামী লীগ নেতা শামছুল হক মিজান শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন। বাম চোখের উপরে অংশে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে এবং তাঁর ব্যাক্তিগত প্রাইভেট কারটিও সন্ত্রাসীর ভেঙ্গে ফেলেছে। সামচুল হক মিজানকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে ৩ সংবাদকর্মীসহ মোট ৬ জন আহত হয়েছেন। ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় আহত সামচুল হক মিজান বাদী হয়ে জাকির হোসেনকে ১নং বিবাদীসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জন আসামি করে থানায় এজাহার দিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি রোববার বেলা সাড়ে এগারোটায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের নির্বাচনী এলাকার ইছাপুর ইউনিয়নের পূর্ব সোন্দড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে সরকারি রাস্তায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত সামচুল হক মিজান রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব। আহত অন্যরা হলেন পূর্ব সেন্দড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঈগল মার্কার চীপ এজেন্ট আনোয়ার হোসেন, আহত সামচুল হক মিজানের গাড়ী চালক লোকমান হোসেন, সংবাদকর্মী মিজানুর শামীম, হাসানুর জামান, ইকবাল খন্দকার শান্ত। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় শামছুল হক মিজানসহ অন্যরা ভোটকেন্দ্রের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় হত্যা, মাদক ও পুলিশ এ্যাসল্ট মামলার আসামি, বিএনপির সাবেক ক্যাডার কথিত যুবলীগ নেতা জাকির ওরফে হাজি জাকির দলবল নিয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে মিজানের ব্যক্তিগত গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করা হয়। ঘটনার ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিক ইকবাল খন্দকার শান্ত মোবাইল ফোনে ক্যামেরা করতে সন্ত্রাসীরা তাঁর ফোনসেট ভেঙে ফেলে। জাকির নৌকার প্রার্থী আনোয়ার খানের অনুসারি হিসেবে পরিচিত।
আহত শামছুল হক মিজান বলেন, সকাল আনুমানিক ০৮.৪৫ সময় আহত আনোয়ার হোসেন আমাকে ফোন করে জানায়, নৌকার লোকেরা তাকে মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দিয়েছে। এ খবর শুনে আমি ১১.৩০ মিনিটে সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতেছিলাম। এমন সময় আমি কিছু বুঝার আগেই মূহুর্তের মধ্যেই ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি, উপজেলা বিএনপির সাবেক শিল্প বিষয়ক সম্পাদক, ইছাপুরের সজীব হত্যা মামলার আসামি ও পুলিশ আক্রমণকারী মামলার আসামি, চট্টগ্রামে বিশ হাজার পিচ ইয়াবা চোরাচালান মামলার আসামি এবং লক্ষ্মীপুর নোমান-রাকিব ডাবল হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাসেম জিহাদীর ভাগিনা কুখ্যাত সন্ত্রাসী জাকিরে নেতৃত্বে অজ্ঞাত ১৫/২০ আমার উপর হামলা চালায়। এসময় জাকির আমাকে প্রানে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর হাতে থাকা ধারালো ছেনি দিয়ে আমার মাথায় কোপ মারিলে আমি হাত দিয়ে ঠেকালেই কোপটি আমার বাম চোখের উপরে পরলে মারাত্মকভাবে কাটাছেড়া হয়ে চার সেলাই লাগে। এ হামলায় নেতৃত্বদানকারী
জাকির সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। এতে আমরা রক্তাক্ত আহত হই ও আমার ব্যক্তিগত গাড়িটিও সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি, মামলার এজাহার থানায় জমা দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাকির হোসেনকে একাধিকবার ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা সামচুল হক মিজান হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাটি আমাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী পবনের ফলাফল বর্জনঃ
এদিকে রবিবার ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ৬ টায় ফলাফল ঘোষণার ঠিক পুর্ব মুহুর্তে হাবিবুর রহমান পবন তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে নির্বাচনে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দেন। ফেসবুক লাইভে দেখা যায় হাবিবুর রহমান পবন রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এবং রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মানের সামনে গিয়ে বলেন, এই নির্বাচন একটি প্রহসনের নির্বাচন। গত দুই তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত যা যা হয়েছে আমি জাতীর কাছে তুলে ধরবো এবং মানানীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো। আমি এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করালাম। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকা নিয়ে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার খান ও যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান পবন ছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টির মাহামুদুর রহমান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নিয়াজ মাখলুম ফারুকী (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোশাররফ হোসেন (আম), স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ গোফরান। এদিকে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের ১৫টি ভোটকেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রভাব বিস্তার করতে দেখা গেছে। এতে করে বেশির ভাগ কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে অনিচ্ছা দেখান।