ভিবি নিউজ অনলাইন
সকল অনিয়ম-দুর্নীতি দূরীকরণে এবং জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় সাংবাদিকরা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে বর্তমানে ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যের বিষয়টিই মুখ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে হলুদ সাংবাদিকতার সূত্রপাত। জসেফ ক্যাম্পবেল হলুদ সাংবাদিকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন গুরুত্বহীন সংবাদ বড় করে দেয়া, গুজব-গুঞ্জন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা। শুরুতে প্রচার বাড়ানোর জন্য অশুভ প্রতিযোগিতাকে বলা হতো হলুদ সাংবাদিকতা। তখন অবশ্য চাঁদাবাজি ছিল না। এখন সব অনৈতিক কাজকে হলুদ সাংবাদিকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজপোর্টাল ও যত্রতত্র ফেসবুক লাইভ, প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছেন এসব সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিরা। দেখা যাচ্ছে নারী নির্যাতন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্লামেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে সর্বত্র। এছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার কার্ড কিনে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। বর্তমানে সাংবাদিকতার মতো সংবেদনশীল একটি পেশা যেন অনেক সহজ হয়ে গেছে। যে যখন ইচ্ছে একটি বুম মাইক্রোফোন, মোবাইল বা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে যান, বনে যান নামজাদা জাঁদরেল সাংবাদিক। তার জন্য লাগে না শিক্ষাগত যোগ্যতা, লাগে না কোনো বিদ্যা বুদ্ধির জোর। ফলে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এসব সাংবাদিকদের সংখ্যা। সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশের কথা বলে অর্থ আদায়, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি, মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস বা সাংবাদিক লিখে মাদকের ব্যবসা বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। আর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকরা। বৃহৎ পরিসরে সাংবাদিকও একজন শিক্ষক। সাংবাদিক সমাজ, দেশ তথা বিশ্ব নাগরিকদের জন্য নানান প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে? সর্বক্ষণ তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। তাদের মাধ্যমেই মানুষের তথ্য লাভের অধিকার নিশ্চিত হয়। কিন্তু যখন প্রশ্ন উঠে এসব ভুয়া সাংবাদিকতার কথা তখন সেটা দেশের জন্য বেশ উদ্বেগ জনক।
কিছু নামধারী সাংবাদিকের ফলে সাংবাদিকতার মতো মহৎ একটি পেশার মুখে প্রতিনিয়ত কালিমা লেপিত হচ্ছে। এইসব অসাধু সংবাদিকদের কারণে অনেক মূলধারার সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তা শিকার হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের কারণে জনসাধারণের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। জনজীবনে গণমাধ্যমের প্রভাব অপরিসীম। সংবাদপত্রকে আধুনিক রাষ্ট্র
ব্যবস্থার অনিবার্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম, আর সাংবাদিকদের বলা হয় জাতীর বিবেক। তাই কর্তৃপক্ষকে এখনি এসব ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। প্রথমত ভুয়া সাংবাদিকতা রোধে মূলধারার সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। ভুয়া সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে আর তাহলেই এইসব ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে। পরিশেষে বলা যায় জনগণের এই আস্থাই দর্শন, পেশা ও ব্যবসা হিসেবে সাংবাদিকতার মূল শক্তি। ভুয়া খবরের যুগে সত্য খবর প্রচার করার দায়িত্বশীলতাই পেশাদার সাংবাদিকতাকে রক্ষা করবে এই প্রত্যাশা।