ভি বি রায় চৌধুরী –
লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এ বর্জ্যের স্তূপ দিন দিন বড় হচ্ছে। এটি কমানোর জন্য আগুনে পোড়ানো হচ্ছে বর্জ্য। আর এর থেকে নির্গত দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিন বছর আগে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (বর্জ্য পরিশোধন) নির্মাণ করা হলেও তা এখনো অকেজো। বর্জ্যগুলো সড়কের পাশে বা জনবহুল এলাকায় ফেলা হয়। ভরাট করা হয় পুকুর ও নিচু জমি। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে থমকে আছে বর্জ্য
ব্যবস্থাপনার এ প্রকল্পটি।
সরেজমিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল এলাকায় গিয়ে আশপাশে বর্জ্যের বড় বড় স্তূপ দেখা যায়। আবার কয়েকটি স্থানে আগুনে পোড়াতে দেখা যায় বর্জ্য। এমনিতেই ওই এলাকায় বাতাসে ভাসছে বর্জ্যের দুর্গন্ধ। তার ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিক আগুনে পোড়ানোর কারণে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ইটেরপুল এলাকায় সড়ক বিভাগের একটি বড় পুকুর বর্জ্য দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে ও পুকুর ভরাট করেও
কমানো যাচ্ছে না পরিমাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরেও এ পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়নি। ২০২১ সালে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে যুব উন্নয়ন ভবনের পেছনে একটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হয়। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতকরণ (সেক্টর) প্রকল্প স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি বাস্তবায়ন করে এলজিইডি, ডিপিএইচই ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভা।
ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির যৌথ অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ওপিইসি ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশলান ডেভেলপমেন্ট। এদিকে প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথক করে কাজে লাগানোর কথা ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয় দাতা সংস্থা। কিন্তু সরকার ও দাতা সংস্থার দেয়া নির্দেশিত শর্ত ‘কারিগরি ও আর্থিকভাবে সহায়তা পেতে ল্যান্ডফিল স্টেশন নির্মাণের আগে ওই এলাকায় যেসব বর্জ্য
ফেলা হয়েছিল, পৌর কর্তৃপক্ষ তা স্বল্প সময়ের মধ্যে অপসারণ করবে’। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি পৌরসভা। সংগ্রহকৃত বর্জ্য ফরতর ফেলা এবং আগুনে পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের কারণে প্রকল্প থমকে গেছে। এতে তিন বছর ধরে অলস পড়ে আছে ল্যান্ডফিলটি।
জানা গেছে, প্রতিদিন ছোট-বড় পাঁচটি ও ৩৫টি ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে ৮২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এরপর এ বর্জ্য লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উত্তর তেমুহনী এলাকায় ফেলা হয়। পরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই বর্জ্য সেখান থেকে ল্যান্ডফিল এলাকায় নেয়া হয়।
ল্যান্ডফিল এলাকায় বর্জ্য দিয়ে দখল করে রাখা জমির মালিক ইমতিয়াজ ইমু বলেন, ল্যান্ডফিল এলাকায় আমাদের ৭৭ শতাংশ জমি রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক এতে বর্জ্য ফেলা শুরু করে। বাধা দেয়ায় হুমকির শিকার হতে হয়েছে। পরে আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা করি। এর পরও দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য ফেলে বড় বড় স্তূপ করে রেখেছে। ল্যান্ডফিল এলাকার বাসিন্দা কৃষক আলম জানান, ‘ল্যান্ডফিলের
মুখেই আমাদের বসতি। বর্জ্যের দুর্গন্ধে আমরা টিকতে পারি না। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কনজারভেশন ইন্সপেক্টর কয়েজ আহম্মদ জানান, ২০২১ সালে ৪ একর জমিতে ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হয়। এতে মানববর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পৃথক ইউনিট রয়েছে। তবে অপচনশীল বর্জ্য রিসাইকেল ইউনিট নেই। এ অপচনশীল বর্জ্য বাছাইয়ের জন্য দৈনিক হাজিরায় ১৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। কয়েকটি কারণে আর্থিক সুবিধা বন্ধ হওয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখন আর কাজ করছে না। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূইয়া বলেন, জনবল সংকট ও অর্থ সংকটের কারণে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ রয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে ল্যান্ডফিলের আশপাশে বর্জ্য স্তূপ করতে হচ্ছে। চলতি বছরেই প্রকল্পটি চালু করা হবে।