লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লাল সবুজ মোড়কে মোড়ানো সরকারি ঔষধ বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি হওয়া এবং উক্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের রুমে মাসিক স্বাস্থ্যসেবা মিটিংয়ে লক্ষ্মীপুর সদর ৩ আসনের এমপি গোলাম ফারুক চরম উদ্যোগ প্রকাশ করে ওষুধ সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা স্টোর কিপার শামীম হোসেনকে দোষারোপ করে তার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তিমূলক বদলি করার কথা জানিয়েছেন।
উক্ত স্বাস্থ্য সেবা মিটিং এ আরো উপস্থিত ছিলেন রায়পুর ২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন মহোদয় , জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান, পুলিশ সুপার তারেক বিন রশিদ, অতিরক্ত জেলা প্রশাসক মেহের নিগার, সিভিল সার্জন ডাক্তার আহমদ কবির,বিএমএ ও সচিপের লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি ডাক্তার জাকির হোসেন, পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাছুম, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অরূপ পাল, মনির পাটওয়ারীসহ হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারি,সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এমপি গোলাম ফারুক স্টোরকিপার শামীমের বিষয়ে মাসিক স্বাস্থ্য মিটিংয়ে কথা বলার পরেও অদ্যবধি শামীম স্টোর কিপারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল অথবা সিভিল সার্জন অফিস থেকে তার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ওষুধ সংরক্ষণাগারের স্টোর কিপারের দায়িত্বে থাকা শামীম জনতা বাজার এলাকায় কসাই বাশার থেকে দেড় লাখ টাকা করে ৫০ শতক জমি কিনে বিশাল গরুর ফার্ম দিয়েছে। সরকারি ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসিতে ধরা পড়ার পরপরই কোরবানীর ঈদে সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।এ ছাড়াও সে মৎস্য খামারসহ আরো একাধিক স্থানে বিপুল সম্পত্তি খরিদ করেছেন।
দীর্ঘদিন থেকে লক্ষীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম্য চিকিৎসকদের দোকানে সরকারি ঔষধ বিক্রি করতে দেখা যায়। তা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সম্প্রতি মাতৃমঙ্গলের সামনে জহির ফার্মেসিতে সরকারি স্যালাইন, ইনজেকশন এবং বিভিন্ন ঔষধ পাওয়ায় জহির ও ইসমাইল নামের দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের জনতা বাজারের জনতা ফার্মেসিতে শাবানা নামের এক নারীকে শল্য চিকিৎসক আবুল কাশেম সরকারি ইনজেকশন পুশ করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই নারী সাংবাদিকদের খবর দেয় এবং তা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই নিয়ে চলছে জেলা জুড়ে তুলকালাম কান্ড।
হাসপাতালে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে একাধিক সেবা প্রার্থী রোগীরা অভিযোগ করে বলেন -হাসপাতাল থেকে এন্টাসিড, প্যারাসিটামল ও গ্যাসের বড়ি ছাড়া দামী কোন ওষুধ দেয়া হয় না। বাহির থেকে ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপ্ট করেন ডাক্তাররা।
সদর হাসপাতালের ফার্মেসীতে বসা এক ওষুধ বিলিকারক বলেন- বহির্বিভাগের জন্য কোন ঔষধ আলাদাভাবে কেনা হয় না। ইনডোর থেকে ডান বাম করে বহির্বিভাগে ওষুধ দেয়া হয়।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অরূপ পাল বলেন-‘আমি গণমাধ্যমে খবরটি দেখেছি, কিন্তু আমার সময় এসব হয়েছে বলে মনে হয় না। আমি কর্মস্থলে যোগদান করেছি এখন এক মাস হয়নি, এটা আমার যোগদানের পূর্বে হতে পারে। তবে আমি এ বিষয়ে সচেতন এবং কঠিন আছি।’
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আহমদ কবির এপ্রতিবেদক কে বলেন- বিচ্ছিন্নভাবে দুই এক জায়গায় সরকারি ওষুধ পাওয়া গেছে। এটা গণমাধ্যমে দেখেছি। আমরা ড্রাগ সুপারসহ ঘটনাস্থল ভিজিট করেছি, তদন্ত করছি,সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্টোরকিপার শামীমের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা এখনো তার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ পাইনি। পেলে তার বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমান ঔষধ রোগী দের দেয়া হয়,বিষয়টি সচিব মহোদয় সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে সিভিল সার্জন জানান।
স্টোরকিপার শামীম হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি ও তার বক্তব্যও জানা যায়নি।