কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ:
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকায় অবৈধভাবে খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। রোববার (৪ মে) সকালে তোরাবগঞ্জ মতিরহাট সড়কের তুলাতুলি-মুসার খালের দখল হয়ে যাওয়া অংশের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী অংশ নেন। এসময় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য ও খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কমলনগর উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কমলনগর উপজেলা সভাপতি মাওলনা মোহাম্মদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, ছাত্রনেতা মোঃ নাঈম হোসেন, মাওলানা মাহফুজুর রহমান জাবেরী, বিএনপি কর্মী মোঃ শাহজাহান এবং কৃষক আবুল হাসেম, আবদুল মতিন প্রমুখ।
অভিযুক্ত দখলকারী ফারজানা আক্তার মতিরহাট বাজার এলাকার মরহুম আবি আবদুল্লাহর মেয়ে।
জানা যায়, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজার সংলগ্ন এলাকায় অভিযুক্ত ফারজানা আক্তার খালের মধ্যখানে পিলার দিয়ে মাটি ভরাট শুরু করে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসী বাঁধার মুখে কিছুদিন তিনি কাজ বন্ধ রাখেন। কিন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে তিনি আবার খালের মধ্যখানে সিমেন্টের পিলার ও কাঠ দিয়ে প্রায় ১০ফুট চওড়া ও ৪০ফুট লম্বা খাল দখলে নেন। তখন স্থানীয়রা উপজেলা ভূমি অফিসকে অবগত করেন। পরবর্তিতে ভূমি সার্ভেয়ার ও তহশিলদার এসে দখলে থাকা সিমেন্ট ও কাঠের সরঞ্জাম গুলো ভেঙে দখলমুক্ত করেন। এনিয়ে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রশাসন কর্তৃক দখলমুক্তকরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই ফারজানা আক্তার খালকে নিজের জায়গা দাবী করে খালের মধ্যে আবার নতুনভাবে ৪টি আরসিসি পিলার তৈরি করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা আবারো বাঁধা দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দেন। এ ছাড়াও উপজেলা ভূমি অফিস গত মার্চ মাসে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ফারজানার উপস্থিতিতে খালের সীমানা মেপে দখলের অংশ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্ত তিনি সেটাও অমান্য করে আবারো রাতের আঁধারে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। এতে ফারজানার অবৈধ দখল অব্যাহত থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিষয়টি প্রশানের নজরে আসলে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মোহাম্মদ আরাফাত হোছাইন গত ২৭ এপ্রিল গিয়ে অবৈধভাবে দখল করা অংশ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্ত ফারজানা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে যথারীতি তার কাজ চালিয়ে যান।
জানতে চাইলে অবৈধ দখলকারী ফারজানা আক্তার বলেন, আমার কাগজপত্র সঠিক। আমি আমার জায়গায় দোকানঘর করছি। এসিল্যান্ড কোন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে কাজ বন্ধ রাখতে বলছে।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসাইন বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা অংশের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু ফারজানা যেহেতু শুনেনি আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আমরা খালের জায়গা উদ্ধার করবো।
এদিকে,একই কায়দায় তোরাবগঞ্জ পূর্ব বাজারে ‘তোরাবগঞ্জ -নোয়াখালী সড়কের উত্তর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবোর)জলাশয় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে একই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ ইউনিয়ন বিএনপির এ নেতা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ খাল হিসেবে পরিচিত মুসার খালের সংযোগ অংশ তোরাবগঞ্জ পূর্ব বাজারের ওয়াপদা খাল ভরাট করে একাধিক মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়সারাভাবে তদন্ত করে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন।যদিও অভিযুক্ত বিএনপি নেতা নির্ভয়ে খাল দখল কর্মযজ্ঞ চলমান রেখেছেন।
তাঁর এই খাল দখলের ফলে বর্ষা মৌসুমে অন্তত ৫ হাজার লোক ও হাজার হাজার ফসলি জমি পানি বন্দী হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।তাছাড়া ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থেকে যায়।
ভুক্তভোগী জনসাধারণের দাবি অনতিবিলম্বে তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজারের খাল দখলবাজ ফারজানা ও পূর্ব বাজারের মোসলেহ উদ্দিনের হাত থেকে খাল দখলমুক্ত করে বাসযোগ্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা।